২৮ ডিসেম্বরের এ ভোটকে সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচারণাও শেষ হল সোমবার দিবাগত রাত ১টায়।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা সদরে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সদস্য পদে ভোট দেবেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা।
এই নির্বাচন উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষনা না হলেও ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্থাপনাগুলোর সব কার্যক্রম ওই দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে থাকবে সাধারণ ছুটি।
নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সুন্দরভাবে করার জন্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সামগ্রীও পৌঁছে গেছে।”
প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনটিও আয়োজন ইসির কাছে ‘চ্যালেঞ্জিং’ বলেন তিনি।
বিধি অনুযায়ী ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় কোনো জনসভা আহবান, অনুষ্ঠান কিংবা তাতে বিজয়ী কিংবা পরাজিত প্রার্থী কেউ অংশ নিতে পারবেন না।
২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে মটর সাইকেলের উপর। আর ২৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বন্ধ হচ্ছে ৯ ধরনের যানবাহন চলচেলের ওপরে নিষেধাজ্ঞা। এগুলো হচ্ছে, -বেবি ট্যাক্সি/অটোরিক্সা, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জীপ, পিক আপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পো।
তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে বাকি ৬১ জেলায় এ ভোট হচ্ছে।
সচিব জানান, স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচন থেকে কিছু আলাদাভাবে হচ্ছে জেলা পরিষদের ভোট। দেশজুড়ে নির্বাচন হলেও ভোটার সংখ্যা কমের কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন হবে না। তবে ভোট ও যানবহন চলাচলের ক্ষেত্রে অন্য নির্বাচন থেকে কিছুটা শর্ত শিথিল রাখা হয়েছে।
তবে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ রাখা হবে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা এড়াতে।
এদিকে, দেশব্যাপী জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নেই কোনো উত্তাপ কিংবা আলোচনা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যেও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নেই বললেই চলে। ফলে নিরুত্তাপ এই নির্বাচন ঘিরে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ কম।
নির্দলীয় এ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ভোটে না থাকার ঘোষণা দিয়েছে, আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহীদের মধ্যেই মূলত লড়াই হবে।
প্রতিটি জেলায় একজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ভোট হবে।
সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হলেও জেলা পরিষদ আইনে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই।
জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভোটে জেলা পরিষদের নতুন প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।
নিরাপত্তায় প্রায় ২৩ হাজার
ইসি সচিব জানান, জেলা পরিষদের প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকবে ২০ জন করে সদস্য। তারা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, ব্যাটালিয়ান আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা।
এর মধ্যে ১ জন অস্ত্রসহ, পুলিশ (কনস্টেবল) অস্ত্রসহ, আনসার ১জন অস্ত্রসহ, আনসার ১জন অস্ত্রসহ এবং অঙ্গিভূত আনসার ১৫জন লাঠিসহ (এর মধ্যে পুরুষ ৮ জন ও নারী ৭জন)।
কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং র্ফোস থাকবে বিজিবি ও র্যাব। প্রতিটি উপজেলায় বিজিবির ২টি মোবাইল টিম (প্লাটুন ২টি প্রতি প্লাটুনে সদস্য সংখ্যা ৩০জন) এবং ১টি স্ট্রাইকিং র্ফোস (১প্লাটুন)।
প্রতিদ্বন্দ্বী ৩৯৩৮জন
ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৮জন। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় এ সংখ্যা ছিল ৪২৭১জন। প্রত্যাহার এবং মনোনয়নপত্রে ক্রটির কারণে কমেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা।
বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২১জন রয়েছে। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকছেন ৩৯ জেলায় ১২৪ জন।
সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এখন ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০৬ জন।
প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়ন জমার সুযোগ থাকলেও কেউ এ সুযোগ নেয়নি।
ভোটার ৬৩১৪৩, কেন্দ্র ৯১৫
জেলা পরিষদের ৬১ জেলায় ৬৩ হাজার ১৪৩ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন এবং নারী ভোটার ১৪ হাজার ৮০০ জন।
৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬৩ ১৪৩জন ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ৯১৫টি। আর কক্ষ থাকছে ১ হাজার ৮৩০টি। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
ব্যালট মুদ্রণ ১৩৮১২৬
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীর এলাকা বাদ দিয়ে বাকি প্রার্থীদের জন্য চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১২৬টি ব্যালট মুদ্রণ করেছে কমিশন।
এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদের জন্য ৩৯ হাজার ৮৭টি, সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ৫১ হাজার ৪৩৯টি এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ৪৭ হাজার ৬০০টি।
ব্যয় সোয়া ৫ কোটি টাকা
ইসির বাজেট শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এনামুল হক জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরিচালনা খাতেই সোয়া ৫ কোটি টাকার বেশি বাজেট ধরা হয়েছে। পরে আইন শৃঙ্খলাখাতের ব্যয় যুক্ত হবে।
নির্বাচন ঘিরে ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৮ দিনের জন্য ৯১ জন নির্বাহী হাকিম নির্বাচনী এলাকাগুলোতে নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ভোটের সময় চার দিন ৯১ জন বিচারিক হাকিম থাকবেন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর মোবাইল-স্ট্রাইকিং ফোর্সে। তাদের দায়ত্ব পালনের সময় জ্বালানি, আপ্যায়নসহ আনুষঙ্গিক খরচ ধরে কোটি টাকার বাজেট ঠিক করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষক
৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচনে আটটি সংস্থার ৩ হাজার ২২৫ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে আসক ফাউন্ডেশনের আড়াই হাজার এবং জানিপপের তিন শতাধিক পর্যবেক্ষক থাকবেন।
ভোট বৃত্তান্ত
সিটি, পৌর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে দলীয়ভাবে ভোট হলেও জেলা পরিষদে তা হচ্ছে না।
গত নভেম্বরে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের সব স্তরে ভোটের জন্য বিল উপস্থাপন করা হলেও পরে জেলা পরিষদের বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল। আর কোনো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি।
১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদের সরকার প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল; পড়ে আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে।
এরপর ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়। অনির্বাচিত এই প্রশাসকদের মেয়াদ শেষেই ডিসেম্বরে নির্বাচন হচ্ছে।